বুধবার, জুন ৭, ২০২৩
Homeপ্রধান সংবাদআগস্টের আগে ফের বন্যার শঙ্কা

আগস্টের আগে ফের বন্যার শঙ্কা

বৈশ্বিক, আন্তঃদেশীয় এবং অভ্যন্তরীণ এই তিন কারণে সিলেট ও সুনামগঞ্জে গত তিন মাসে ৩ বার আকস্মিক বন্যায় মানবিক বিপর্যয় দেখা দিয়েছে বলে মনে করে বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)। এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণ পেতে ৬টি সুপারিশও দিয়েছে সংগঠনটি। গতকাল মঙ্গলবার ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে ‘আকস্মিক বন্যায় সিলেটে মানবিক বিপর্যয়: কারণ ও করণীয়’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই অভিমত জানায় বাপা। সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন আরেক পরিবেশবাদী সংগঠন বেনের সমন্বয়ক ও যুক্তরাষ্ট্রের লক হ্যাভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মো. খালেকুজ্জামান। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বৃষ্টির মাত্রা, পরিমাপ ও ধরনের পরিবর্তন হয়েছে। ভারতের চেরাপুঞ্জিতে বা আমাদের সুনামগঞ্জে যে পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে তা তো হওয়ার কথা না। বৃষ্টির পরিমাণ বেড়ে গেছে। বৈশ্বিক উষ্ণায়নের কারণে আমাদের অঞ্চলে বর্ষাকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ এবং বন্যার মাত্রা যে বেড়ে যাবে তা বিজ্ঞানীরা আগেই প্রাক্কলন করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, এটা কিন্তু শেষ বৃষ্টিপাত না। এ বছর আরও বন্যা হতে পারে। আগস্টের আগে আগে বন্যা হতে পারে। জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের এখানে গেঁড়ে বসেছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বন্যা আমাদের জন্য চিরস্থায়ী হবে বলে মনে হচ্ছে। কৃষিবিদদের নতুন করে গবেষণা করে বন্যা সহিষ্ণু ফসল উৎপাদনে জোর দিতে হবে। বন্যার আন্তঃদেশীয় কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মেঘনা অববাহিকার ৫৭ শতাংশ এলাকাই ভারতে অবস্থিত। মেঘনা অববাহিকায় ১৬টি আন্তঃদেশীয় নদী প্রবাহমান। কিন্তু এর একটির জন্যও পানি-পলি ব্যবস্থাপনা যৌথভাবে করার জন্য কোনো চুক্তি নেই। যৌথ নদী কমিশনের তালিকাবদ্ধ এই ১৬ আন্তঃনদীর বাইরেও আরও ৩০টির মতো ছোট ছোট আন্তঃদেশীয় নদী-নালা এবং খাল রয়েছে। শুকনো মৌসুমে ভারত সেচ ও পানিবিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নদীর পানি ধরে রেখে ইচ্ছানুযায়ী ছাড়ে। অন্যদিকে বর্ষাকালে উজানের সব বাঁধ এবং জলাধারের গেট খুলে দিয়ে ভাটিতে অবস্থিত হাওর অঞ্চলে বন্যার তীব্রতা বাড়াতে সহায়তা করে। এ সময় তিনি ভারতের সঙ্গে যৌথ নদী-পলি-পানি ব্যবস্থাপনায় সরকারের পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন। তৃতীয় কারণ হিসেবে তিনি বলেন, নদীগুলোকে যে অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে নিয়ে গেছি তাতে নদীর বক্ষ ভরাট হয়ে গেছে। সেগুলোকে খনন করতে হবে। এই অধ্যাপকের মতে, সাত দশক ধরে বেষ্টনী বা কর্ডনভিত্তিক ভুল পানি নীতিমালা বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের নদী, জলাশয় এবং হাওরের ব্যাপক ক্ষতি করা হয়েছে। নদীর পাড় ধরে বাঁধ, পোল্ডার এবং বিভিন্ন ধরনের ভৌত অবকাঠামো স্থাপনের মাধ্যমে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা হয়েছে। তিনি বলেন, হাওরের সব প্রবাহই ভৈরব বাজারে অবস্থিত মেঘনা নদীর উপরে নির্মিত তিনটি রেলওয়ে ও সড়ক সেতুর নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এই ব্রিজগুলোর কারণে নদীর প্রস্থচ্ছেদ অনেক কমে গিয়েছে। ব্রিজগুলোর উজানে মেঘনা নদীর প্রস্থচ্ছেদ অনেক বেশি। উজানের পানি প্রবাহ ব্রিজের নিচে এসে বাধাগ্রস্ত হয়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি করে। বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিল বলেন, উন্নয়নের নামে যে ধরনের প্রকল্প নিচ্ছি তাতে হাওর ও নদীবেষ্টিত অঞ্চলের প্রাকৃতিক ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। এর জন্য মেঘনা ব্রিজ, মিঠামইনের অল ওয়েদার সড়ক ও লাঠিটিলার সাফারি পার্ক দায়ী। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে বাপার সুপারিশের মধ্যে রয়েছে- নদীর প্রতি আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা, প্রাকৃতিক কার্যপ্রক্রিয়া আমলে নিয়ে নদীর প্লাবনভূমি নদীর প্রবাহের জন্য বরাদ্দ রেখে উন্নয়ন কর্মকা-ের নামে নদীর ধ্বংস প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা, নদীর স্বাভাবিক গতি ফিরিয়ে আনা, নদীর উৎস থেকে মুখ পর্যন্ত অববাহিকাভিত্তিক সমন্বিত পানি-পলি ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে সব অংশীজনের স্বার্থরক্ষাকারী দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি সম্পাদন করা। এছাড়া জাতিসংঘের পানি প্রবাহ আইন কার্যকর করে সেই আইনের আলোকে চুক্তি করতে হবে এবং গ্যারান্টি ক্লজসহ সেই চুক্তির বাস্তবায়ন নিশ্চিত ও সব আন্তঃদেশীয় নদীর পানি-পলি ব্যবস্থাপনাকে রাষ্ট্রীয় কূটনীতির কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করার সুপারিশ করা হয়েছে।

আরও খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

সাম্প্রতিক খবর

সর্বাধিক পঠিত

- Advertisment - spot_img