মিনহাজ আহমেদ ,নিউয়র্ক।
গুটিকয় হিন্দি গান গেয়ে ভারতে জেমস্-এর ঈর্ষণীয় জনপ্রিয়তার প্রসঙ্গ কথায় কথায় উঠে আসাতে একবার জনৈক স্বদেশবিদ্বেষী বাংলাদেশি, উপযাচিত ভারতপ্রেমিক কুতর্ক জুড়ে দিলেন আমার সাথে। তিনি বলেছিলেন, প্রতিভা-ট্রতিভা কিছুনা, ভারত চেয়েছে বলে এটা সম্ভব হয়েছে। অর্থাৎ কণ্ঠশিল্পী জেমস্-এর গায়কীর কোনো কৃতিত্ব নেই, সকল কৃতিত্ব হচ্ছে ভারতীয় যন্ত্রী, সুরকার, গীতিকার, এবং অন্যান্য প্রাসঙ্গিক ভূমিকা পালনকারী ব্যক্তিদের।


স্বদেশবিদ্বেষী এ ব্যক্তিটি সরাসরি বলে থাকেন, বাংলাদেশে ভালো কিছু নেই এবং সম্ভব নয়। পরে জেনেছি, তার রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দের পা-চেটেও কাঙ্ক্ষিত পদমর্যাদা পেতে ব্যর্থ হয়ে তিনি এই চরম আত্মঘাতি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।
আমাদের দেশের রাজনীতি, আমলাতন্ত্র, সামরিকতন্ত্র, বাণিজ্য নানাভাবে ও নানাস্তরে কলুষিত। তারপরও স্বীকার করতে হয় যে, এসব কলুষ-কালিমা বাংলাদেশের গর্ব করার মতো বিষয়গুলোর উজ্জ্বলতাকে ম্লান করে দেয়না। সেটা শুধু আমাদেরটাকে যেমন ম্লান করেনা, কারোটাকেই করে না। বেশির ভাগ ভালো যেমন সব ভালো নয়, বেশির ভাগ খারাপও তেমন সব খারাপ নয়। এ ধরনের সাধারণীকরণ একক কৃতিত্বের মূল্যায়ন না করে অবমূল্যায়ন করে।


কেউ কেউ জেমস্-এর কণ্ঠের অন্ধ ভক্ত হতে না পারেন, তারপরও স্বীকার করতে হয়, লক্ষ লক্ষ ভক্ত রয়েছেন যারা জেমস্-এর গান সর্বান্তকরণে ভালবাসেন। এবং এরা বাংলাদেশে যেমন, ভারতেও তেমন, এবং ভারতের অবাঙালিদের মধ্যেও তেমন আছেন।



মূল নাম ফারুক মাহফুজ আনাম, পোশাকী/গায়কী নাম জেমস্, ওরফে নগর বাউল। দেশের এবং প্রবাসের নতুন প্রজন্মের বাঙালি ছেলেমেয়েদের মাঝে ভীষণ জনপ্রিয়। গতকাল জ্যামাইকার আমাজুরা কনসার্ট হলে ছিলো জেমস্-এর একক কনসার্ট। সেখানকার দর্শকদের বেশিরভাগ ছিলো ১৮ থেকে ২৮ বছর বয়সী। জেমস্ তিনি রক ধারার গান করেন এবং এই ধারার গানের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো দ্রুত লয়, কণ্ঠ ও যন্ত্রের প্রতিযোগীতামূলক উচ্চকি আওয়াজন। প্রায়শ এসব গানের গীতিকা অংশের চাইতে উচ্চগ্রামের বাদন বেশি গুরুত্ব পায়। তবে রক ধারায় বাণী প্রধান ও পরিমিত যন্ত্রসঙ্গতের গানও রয়েছে। এসমস্ত গানের অনেকগুলো মানবাধিকার ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠা এবং যুদ্ধবিরোধী আন্দোলন সংগঠিত করায় ব্যাপক ভূমিকা রেখেছে। সংখ্যায় কম হলেও বাংলাদেশ ও ভারতের বাংলা রক গানেও এমন উদাহরণ রয়েছে।
নগর বাউল জেমস্ নিজে গিটার বাজান এবং তার কম্পোজিশনে সব সময় পশ্চিমা বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করেন। তবে একবার খমক বাজাতে দেখেছিলাম। তিনি বাউল নামটি নিলেও বাউল সঙ্গীতের কোনো বৈশিষ্ট্যই তার মধ্যে নেই।

সঙ্গীত অনুরাগের কারণে জেমস্-কে বাউন্ডুলে এবং বিদ্রোহী হতে হয়েছিল। এবং সেই বাউন্ডলেপনা ও বিদ্রোহের ফল হলো তার এই অসাধারণ জনপ্রিয়তা।
আমি ভাবি, এই জনপ্রিয়তাকে জেমস্ যদি নিছক বিনোদন ছাড়া সমাজের অন্য কোনো কল্যাণকর কাজে লাগাতে পারতেন, তাহলে সোনায় সোহাগা হতো।