মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৩
Homeপ্রধান সংবাদনারী সাংবাদিকের ভুয়া ভিডিও ছড়ানোয় ২ যুবক গ্রেপ্তার

নারী সাংবাদিকের ভুয়া ভিডিও ছড়ানোয় ২ যুবক গ্রেপ্তার

স্টাফ রিপোর্টার: বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলের নারী সাংবাদিকের চেহারার কিছু অংশ ফটোশপে এডিট করে অশ্লীল ভিডিও বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে দেয় একটি চক্র। বিষয়টি ওই সাংবাদিকের নজরে আসলে এ বিষয়ে গুলশান থানায় পর্নোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে একটি মামলা করেন। মামলার পর গুলশান থানা একটি ফেসবুক আইডি ও একটি ব্লগ থেকে এই অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার প্রমাণ পায়। এরপর সেই আইডি ও ব্লগের মালিককে শনাক্ত করে চট্টগ্রামের হালিশহর ও নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার করে গুলশান থানা পুলিশ। গ্রেপ্তাররা হলেন, চট্টগ্রামের হালিশহরের বাসিন্দা নুর হোসাইন নুরু ও রাজধানীর সবুজবাগের বাসিন্দা সজীব মিয়া। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তাররা জানান, তাদের সিনিয়র নেতাদের নির্দেশে তারা এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে ভাইরাল করার চেষ্টা করছিলেন। গতকাল শনিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির গুলশান বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো.আসাদুজ্জামান। তিনি বলেন, ওই নারী সাংবাদিক গত ৩ ফেব্রুয়ারি ডিএমপির গুলশান থানায় অভিযোগ করেন, একটি মৌলবাদী সম্প্রদায় ও কিছু রাজনৈতিক দলের কর্মীরা তার কাজে ঈর্ষান্বিত হয়ে তার চেহারার কিছু অংশ ফটোশপের মাধ্যমে এডিট করে নগ্ন ও অশ্লীল ভিডিও বানিয়ে ফেসবুকে ছড়িয়ে দিয়েছে। তিনি তার অভিযোগে আরও বলেন, ‘নুর হোসাইন নুরু’ নামে একটি ফেসবুক আইডিসহ আরও একাধিক ফেসবুক আইডি ও ব্লগ থেকে তার এই ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, অভিযোগ পাওয়ার পর গুলশান থানা এ বিষয়ে কাজ শুরু করে দেয়। প্রথমে নুর হোসাইন নুরু নামে আইডিটির মালিককে শনাক্ত করা হয়। নুর চট্টগ্রামের হালিশহরের বাসিন্দা। সে হালিশহর থানার যুবদলের একজন সক্রিয় কর্মী। তার পরিচয় শনাক্তের পর তাকে হালিশহর থেকে তার স্মার্টফোনসহ গ্রেপ্তার করা হয়। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, এ ছাড়া আমরা ‘জনগণের মুখোমুখি’ নামে একটি ব্লগকে শনাক্ত করতে পারি। এই ব্লগটি থেকেও ওই সাংবাদিকের ছবি এডিট করে বানানো অশ্লীল ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এই ব্লগটির মালিক সজীব মিয়া। সে রাজধানীর সবুজবাগ থানা ছাত্র অধিকার পরিষদের সক্রিয় একজন কর্মী। তাকে আমরা নরসিংদী থেকে গ্রেপ্তার করি। ডিসি গুলশান বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে নুর আমাদের কাছে স্বীকার করেছে, তার ফেসবুক থেকে ভিডিওটি ছড়ানো হয়েছে। সে বলেছে, তার সিনিয়র আরেক যুবদলের নেতা তাকে এই ভিডিওটি পোস্ট করতে বলেছিল। সিনিয়র নেতার আদেশে সে ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে ভাইরালের চেষ্টা করে। এ ছাড়া একই সিনিয়র নেতার আদেশে সে ফেসবুকে সরকারবিরোধী অনেক মিথ্যা পোস্টও দেয়। অন্যদিকে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ছাত্র অধিকার পরিষদের সক্রিয় কর্মী সজীব মিয়া জানায়, সে ছাত্র অধিকার পরিষদের সবুজবাগ থানা কমিটির একজন সক্রিয় কর্মী। সে ছাত্র অধিকার পরিষদের সবুজবাগ থানার সহ-সভাপতি তারিকুল ইসলাম তন্ময়ের কাছ থেকে এ ভিডিও পেয়েছে। তার নির্দেশেই সে ভিডিওটি তার ব্লগে পোস্ট করে। গুলশান বিভাগের ডিসি আসাদুজ্জামান আরও বলেন, নুর ও সজীবকে গ্রেপ্তারের পর আমরা আজ আদালতে রিমান্ড আবেদন করে পাঠিয়েছি। রিমান্ড মঞ্জুর হলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে এই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্য আমরা জানতে পারবো। এ ছাড়া নুরের সিনিয়র যুবদল নেতা ও ছাত্র অধিকার পরিষদের সবুজবাগ থানা কমিটির সহ-সভাপতি তারিকুল ইসলাম তন্ময়কে গ্রেপ্তার করতে আমাদের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। যেহেতু এই দুইজনের নির্দেশে তন্ময় ও সজীব ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করেছে, সেহেতু তাদের গ্রেপ্তারের পর জিজ্ঞাসাবাদ করলে ভিডিওটি কী উদ্দেশ্য তারা ভাইরাল করার নির্দেশ দিয়েছিল তা জানা যাবে। তিনি বলেন, আমাদের কাছে প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে, ওই সাংবাদিকের প্রতি ঈর্ষান্বিত হয়ে অশ্লীল ও নগ্ন ভিডিও বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গ্রেপ্তাররা সরকারবিরোধী চক্র। তাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বিভিন্ন আইডিতে নিয়মিত সরকারবিরোধী পোস্ট দিয়ে আসছিল। এক প্রশ্নের জবাবে ডিসি গুলশান বলেন, ভিডিওটি প্রথম পোস্ট হয়েছে নুরের মাধ্যমে। তবে ছাত্র অধিকার পরিষদের সবুজবাগ থানা কমিটির সহ-সভাপতি তারিকুল ইসলাম তন্ময় ও নুরের সিনিয়র যুবদল নেতাকে গ্রেপ্তার করতে পারলে ভিডিও ভাইরাল করার প্রকৃত উদ্দেশ্য জানা যাবে।

আরও খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

সাম্প্রতিক খবর

সর্বাধিক পঠিত

- Advertisment - spot_img