মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ৫, ২০২৩
Homeপ্রধান সংবাদবায়ু দূষণে রাজধানীবাসীর গড় আয়ু কমেছে সাড়ে ৭ বছর

বায়ু দূষণে রাজধানীবাসীর গড় আয়ু কমেছে সাড়ে ৭ বছর

স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকায় বায়ু দূষণ না থাকলে একজন নাগরিক আরও প্রায় সাত বছর সাত মাস বেশি বাঁচতে পারতেন। গতকাল শনিবার রাজধানীর জাতীয় জাদুঘরের সামনে ‘বর্তমানে জনস্বাস্থ্যের প্রধান হুমকি বায়ু দূষণ; বায়ু দূষণ রোধে ধুলা দূষণ বন্ধ কর ও জ¦ালানির মান উন্নয়ন কর’ শীর্ষক মানববন্ধনে বক্তারা এ কথা জানান। বক্তারা বলেন, ঢাকায় বায়ু দূষণ না থাকলে একজন নাগরিক আরও প্রায় সাত বছর সাত মাস বেশি বাঁচতে পারতো। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের মানুষের গড় আয়ু প্রায় ৭২ বছর ছয় মাস। লাইফ ইনডেক্সের গবেষণার মতে, ১৯৯৮ সালে বায়ু দূষণের কারণে গড় আয়ু কমেছিল প্রায় দুই বছর আট মাস। ২০১৯ সালে বায়ু দূষণের কারণে সারাদেশে মানুষের গড় আয়ু কমেছে প্রায় পাঁচ বছর চার মাস। আর ঢাকায় কমেছে প্রায় সাত বছর সাত মাস। দেশের প্রত্যেক জেলাতেই বায়ু দূষণের হার বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নীতিমালা অনুযায়ী অন্তত তিন গুণ বেশি। বায়ুদূষণ রোধ করতে সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও তা পর্যাপ্ত নয়। অতিদ্রুত আইনানুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে স্বাস্থ্যঝুঁকিসহ পরিবেশ বিপর্যয় ভয়াবহ আকার ধারণ করবে। তারা বলেন, বায়ুদূষণ এখন মারাত্মক পরিস্থিতিতে রূপ নিয়েছে। বিশ্বে দূষিত বায়ুর শহরগুলোর মধ্যে দ্বিতীয় অবস্থানে ঢাকা। ধুলা দূষণ, ইট ভাঁটা ও যানবাহনে নিম্নমানের জ¦ালানি ব্যবহারের ফলে নির্গত ধোঁয়া বায়ু দূষণের অন্যতম প্রধান কারণ। বাংলাদেশে ইট ভাটায় জ¦ালানি হিসেবে নিম্নমানের কয়লা ব্যবহার করা হয়। অন্যদিকে যানবাহনের জ¦ালানি হিসেবে অত্যন্ত নিম্নমানের ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল ব্যবহার করা হয়। এতে ধোঁয়া বেশি হয় এবং বাতাসে দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। মানববন্ধনে বলা হয়, অনিয়ন্ত্রিত নির্মাণ কাজ, সমন্বয়হীন সংস্কার কাজ ও রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ইত্যাদি ধুলা দূষণের প্রধান কারণ। এর ফলে শ্বাসকষ্ট, এলার্জি, কাশি, হাঁপানি, ব্রঙ্কাইটিস, উচ্চ রক্তচাপ, মাথাব্যথা, ফুসফুসে ক্যানসার, শুক্রাণুর ক্ষতি, জন্মগত ত্রুটি, স্ট্রোকের ঝুঁকি, কিডনি রোগ, হার্ট অ্যাটাক, মানসিক সমস্যা, হতাশা, বিষাদ, অস্থিরতা এবং অন্যান্য নেতিবাচক অনুভূতির প্রকোপ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে জনস্বাস্থ্য মারাত্মক হুমকির মুখে পড়েছে। ধুলা দূষণ ও কয়লা ব্যবহারে নানা রোগের কেন্দ্রস্থল ঢাকা। ধুলা দূষণের উৎস চিহ্নিত করে ধুলা দূষণ বন্ধ করার কার্যকর পদক্ষেপ এবং দেশে জ¦ালানি হিসেবে ব্যবহৃত নিম্নমানের কয়লা আমদানি বন্ধ করা ও তরল জ¦ালানি হিসেবে নিম্নমানের ডিজেল, অকটেন, পেট্রোল বাজারে যাতে বিক্রি না হতে পারে তার কার্যকারী ভূমিকা পালনের দাবিতে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনসহ (পবা) সমমনা ১৬টি সংগঠন এই মানববন্ধনে অংশ নেয়। মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্র, নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ), দেবীদাস ঘাট সমাজ কল্যাণ সংসদ, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগ, বিডি ক্লিক, পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটি, গ্রিনফোস, ঢাকা যুব ফাউন্ডেশন, সুবন্ধন সামাজিক কল্যাণ সংগঠন, বানিপা, জাতীয় সচেতন ফাউন্ডেশন (জাসফা), পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চ, মৃত্তিকা, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, পরিষ্কার ঢাকা, বেসরকারি উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের যৌথ উদ্যোগে এই মানববন্ধন হয়। পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলনের (পবা) সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন সংগঠনের চেয়ারম্যান আবু নাসের খান, মানবাধিকার উন্নয়ন কেন্দ্রের মহাপরিচালক মাহবুল হক, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি নাজিমউদ্দীন, দেবীদাস ঘাট সমাজ কল্যাণ সংসদের সভাপতি মো. মুসা, পরিবেশ আন্দোলন মঞ্চের সভাপতি আমির হাসান মাসুদ প্রমুখ।
অবশেষে শাবিপ্রবি উপাচার্যের দুঃখ প্রকাশ
স্টাফ রিপোর্টার: আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনাকে ‘অনাকাক্সিক্ষত’ উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশ করেছেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। গতকাল শনিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্য দুঃখ প্রকাশ করেন। সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উপাচার্য বলেন, আমাদের প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া অনাকাক্সিক্ষত ঘটনায় শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ যারা আহত হয়েছেন, তাদের সবার প্রতি আমার আন্তরিক সমবেদনা ও সহমর্মিতা প্রকাশ করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে ঘটে যাওয়া অনাকাক্সিক্ষত ঘটনার জন্য আমি আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। ওই ঘটনার ধারাবাহিকতায় সৃষ্ট অচলাবস্থা কাটিয়ে উঠতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা ও কর্মচারী যাঁরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের সুন্দর ও স্বাভাবিক কার্যক্রম ফিরিয়ে আনতে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন শাবিপ্রবি উপাচার্য। তিনি আরও বলেছেন, আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমাদের এই প্রিয় প্রতিষ্ঠানটিকে বিশ্বমানের বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত করা সম্ভব হবে। এর আগে গত শুক্রবার উপাচার্য কার্যালয়ে অন্যান্য শিক্ষকদের সঙ্গে নিয়ে আলোচনার পর ওই ঘটনার জন্য উপাচার্যকে দুঃখ প্রকাশ করার পরামর্শ দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। টানা প্রায় ২৬ দিন পর বৈঠক ঘিরে এদিন নিজ বাসভবন থেকে বের হন উপাচার্য ফরিদ উদ্দিন আহমেদ। একইদিন শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধিদল। শিক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক শেষে উপাচার্য বিরোধী চলমান আন্দোলন একদিনের জন্য স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। বৈঠক পরবর্তী করণীয় নির্ধারণে গতকাল শনিবার বিকেলে সব শিক্ষার্থীদের নিয়ে বসার কথা জানিয়েছেন তারা। ঘটনার সূত্রপাত শাবিপ্রবির বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হল নিয়ে। গত বছরের ২৫ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের সব আবাসিক হল খুলে দেওয়া হয়। প্রায় ১৯ মাস পর ওইদিন থেকে হলে ফিরতে শুরু করেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা। ফেরার পর হলে তারা বিভিন্ন সংস্কার দেখতে পান। পাশাপাশি বেশকিছু নতুন নিয়মনীতি ও সমস্যার সম্মুখীন হন বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের আবাসিক ছাত্রীরা। এরপর থেকে হলের এসব নিয়মনীতি, সিট বণ্টন, খাবার সমস্যা, ওয়াইফাই সমস্যা, পানির সমস্যা, বাইরের হোস্টেলের ভাড়া নিয়ে দিন দিন শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হল প্রভোস্ট বডির দূরত্ব বাড়তে থাকে। ছাত্রীদের অভিযোগ, এসব বিষয়ে অভিযোগ করে প্রভোস্ট বডির ‘অসদাচরণের’ শিকার হয়েছেন তারা। এসব কারণে গত ১৩ জানুয়ারি থেকে বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী হলের প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা। এরপর ১৬ জানুয়ারি বিকেলে তিন দফা দাবি আদায়ে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। এ ঘটনায় পুলিশ ৩০০ জনকে অজ্ঞাত দেখিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করে। এরপর শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার ঘটনায় উপাচার্যকে দায়ী করে তার পদত্যাগ দাবি করে এতদিন আমরণ অনশনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি চালিয়ে আসছিলেন শিক্ষার্থীরা। বুধবার টানা সাতদিনের অনশন ভাঙলেও উপাচার্যের অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত সাংস্কৃতিক কর্মকা-ের মাধ্যমে অহিংস আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

আরও খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

সাম্প্রতিক খবর

সর্বাধিক পঠিত

- Advertisment - spot_img