বুধবার, জুন ৭, ২০২৩
Homeপ্রধান সংবাদলবণাক্ত জমিতে বিনাসয়াবিন-২ চাষে লাভবান হবে কৃষক

লবণাক্ত জমিতে বিনাসয়াবিন-২ চাষে লাভবান হবে কৃষক

বাংলাদেশের উপকূলবর্তী দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সয়াবিনের উপযুক্ত জাত নির্বাচনের জন্য খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সেলের অর্থায়নে একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে। গবেষণার ফলাফলে দেখা গেছে দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ততা প্রবণ পতিত জমির জন্য অন্যান্য জাতের তুলনায় বিনা কর্তৃক উদ্ভাবিত বিনাসয়াবিন-২ জাতটিই সবচেয়ে আদর্শ জাত। গবেষণা কার্যক্রমটি পরিচালনা করেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রোটেকনোলজি ডিসিপ্লিনের প্রফেসর ড. মতিউল ইসলাম ও একই ডিসিপ্লিনের শিক্ষার্থী বর্ণালী সাহা। এছাড়াও একই ডিসিপ্লিনের সহকারী অধ্যাপক জয়ন্তী রায় গবেষণায় সহযোগিতা করেন। ওই গবেষণায় বারি ও বিনা কর্তৃক উদ্ভাবিত সয়াবিনের ১০টি জাত নিয়ে কাজ করা হয়। ড. মো. মতিউল ইসলাম জানান, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে ও ডুমুরিয়া উপজেলায় পরিচালিত মাঠ গবেষণায় দেখা যায় বিনাসয়াবিন-২ জাতটি অধিক ফলনশীল, লবণাক্ততা সহনশীল, রোগবালাই প্রতিরোধী ও স্বল্পমেয়াদী। তাই বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের লবণাক্ত জমির ব্যবহার এবং ফসলের উৎপাদন বাড়ানোর লক্ষ্যে এটি একটি আদর্শ জাত। তিনি আরও জানান, এ জাতটি হলুদ মোজাইক ভাইরাস প্রতিরোধী ও ১২ ডিএস এম-১ মাত্রা পর্যন্ত লবণাক্ততা সহনশীল এবং কম উর্বর ও লবণাক্ত বেলে দো-আঁশ হতে এটেল দো-আঁশ মাটিতেও চাষের উপযোগী। রবি মৌসুমে পৌষের প্রথম থেকে মধ্য মাঘ এবং খরিপ-২ মৌসুমে শ্রাবণের প্রথম থেকে ভাদ্র মাসের শেষ পর্যন্ত এটি রোপণের উপযুক্ত সময়। গবেষণার জন্য চাষ করতে গিয়ে দেখা গেছে, সয়াবিনে মাকড়সার আক্রমণ বেশি থাকে এবং মাটিতে অবস্থানকারী কিছু ছত্রাকের কারণে গোড়াপচা রোগ দেখা যায়। তবে এতে খুব বেশি প্রভাব পড়ে না। সয়াবিনের বিছাপোকা দমনের জন্য আক্রান্ত পাতা দেখে পোকাসহ তুলে মেরে ফেলতে হবে। তবে আক্রমণ বেশি হলে সেভিন ৮৫ এসপি ৩৪ গ্রাম পাউডার প্রতি ১০ লিটার পানিতে অথবা এডভান্টেজ ২০ এসসি ৩০ মিলিলিটার প্রতি ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে আক্রান্ত জমিতে স্প্রে করতে হবে। অধ্যাপক মো. মতিউল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশের আবহাওয়া সয়াবিন চাষের জন্য অত্যন্ত উপযোগী হলেও কৃষকদের এ ব্যাপারে জ্ঞানের স্বল্পতা থাকায় এ অঞ্চলে চাষ হয় না। শুধুমাত্র লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর চরাঞ্চলে স্বল্প পরিমাণে চাষ করা হয়। কিন্তু আমি পিএইডি গবেষণার সময় দেখেছিলাম সয়াবিন স্যালাইনিটি সহ্য করতে পারে। এরা শুধুমাত্র জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে না। তিনি আরও বলেন, পরবর্তীতে ল্যাব ট্রায়ালে আমরা দেখেছি বিনাসয়াবিন-২ ও বিনাসয়াবিন-৫ লবণাক্ততা সহনশীল ও চাষের জন্য উপযোগী। কিন্তু মাঠ গবেষণার ভিত্তিতে ফলনের পরিমাণ, গাছের স্থায়ীত্ব সবদিক বিবেচনা করে উপকূলীয় লবণাক্ত জমিতে চাষের জন্য বিনাসয়াবিন-২ই সবচেয়ে আদর্শ জাত। এটি চাষ করতে বিশেষ কোনো দক্ষতার প্রয়োজন হয় না। বাংলাদেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে আমন চাষের পর বোরো মৌসুমে জমি ফেলে না রেখে সয়াবিন চাষ করলে কৃষকরা অত্যন্ত লাভবান হবে। তাছাড়া সয়াবিন থেকে প্রাপ্ত প্রোটিন আমাদের শরীরের জন্যও অত্যন্ত নিরাপদ ও কার্যকরী। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সেলের পরিচালক প্রফেসর ড. আশীষ কুমার দাস বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এই গবেষণাটি নিয়ে আগ্রহী। কারণ সয়াবিন আমাদের শরীরের প্রয়োজনীয় প্রোটিনের অত্যন্ত ভালো একটি উৎস। এ অঞ্চলে চাষ শুরু হলে প্রোটিনের চাহিদা পূরণের পাশাপাশি অর্থনীতিতেও সুফল বয়ে আনবে।

আরও খবর

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

সাম্প্রতিক খবর

সর্বাধিক পঠিত

- Advertisment - spot_img